অক্টোবর ১৩, ২০২৫
WhatsApp Image 2025-09-30 at 12.56.15_e30cb02e

Loading

মতিন সাগর

রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার রিকশাচালক মিজানুর রহমান এক সময় স্বপ্ন দেখেছিলেন- নিজস্ব রিকশা থাকলে আর কারও কাছে ভাড়া খাটতে হবে না, সংসারে স্বচ্ছলতা আসবে। সেই স্বপ্ন পূরণের আশায় তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে রিকশা কেনেন। সাত মাস ধরে সংসার ও কিস্তি চালিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিকই, কিন্তু হঠাৎ রিকশার ব্যাটারি নষ্ট হলে তার নতুন করে দরকার হয় ২৮ হাজার টাকা। গচ্ছিত টাকা না থাকায় বাধ্য হয়ে আবারও ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেন। ফলে একসঙ্গে দুটি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে তিনি আজ দিশাহারা। সংসারের খরচ, বাড়িভাড়া আর দুই কিস্তির চাপ- সব মিলিয়ে মিজানের জীবন হয়ে উঠেছে বোঝার পাহাড়।

কই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন দক্ষিণখানের রিকশাচালক মিলাত ও শাহাজান। তাঁদের বক্তব্য- কিস্তি দিতে দিতে আমাদের জীবনটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে রাত অব্দি খেটে যা পাই, তার সিংহভাগ চলে যায় কিস্তিতে। বাকি দিয়ে সংসার চালানোই দুঃসাধ্য।

শাহাজান আরও জানান, প্রায় ৮০ শতাংশ রিকশা বর্তমানে কিস্তিতে কেনা হয়। অর্থাৎ রাজধানীতে চলাচলকারী বেশিরভাগ রিকশাচালকই ঋণের ভারে ন্যুব্জ। কিস্তির চাপে তাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। কোনো দুর্ঘটনা, অসুস্থতা বা হঠাৎ অতিরিক্ত খরচ এলে তাদের দারিদ্র্য আরও চরম আকার ধারণ করে।

স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই কিস্তি নির্ভর ব্যবসা আসলে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষদের দুঃস্বপ্নে ঠেলে দিচ্ছে। দরিদ্র মানুষরা স্বপ্ন দেখে স্বনির্ভর হবার, অথচ কিস্তির নামে তারা নতুন এক দাসত্বে জড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিনের আয় যদি সামান্য কমে যায়, কিংবা হঠাৎ বাড়তি খরচ চলে আসে, তখনই তারা বাধ্য হয় নতুন ঋণ নিতে। এভাবে চলতে চলতে তাদের ঋণের বোঝা হয় পাহাড়সম।

স্থানীয় এক শিক্ষক মনে করেন, সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ কিংবা স্বল্প সুদের তহবিল না থাকায় রিকশাচালকদের মতো শ্রমজীবীরা মহাজন আর এনজিওদের কাছে কিস্তির ফাঁদে পড়ছে। একদিকে অতিরিক্ত সুদ, অন্যদিকে সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তির চাপ- সব মিলিয়ে তারা বেকায়দায় পড়ে যায়।

স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা মনে করছেন, রিকশাচালকদের জন্য জরুরি তহবিল বা স্বল্প সুদে ঋণব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। একইসঙ্গে কিস্তি নির্ভর প্রতারণামূলক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। না হলে লাখ লাখ পরিশ্রমী মানুষ আরও গভীর দারিদ্র্যের অতলে তলিয়ে যাবে।

রিকশাচালকদের এই মানবিক আহাজারি আমাদের চোখ খুলে দেওয়ার মতো। সমাজের স্বল্প আয়ের এই পরিশ্রমী মানুষরা যদি ঋণের ফাঁদে জর্জরিত হয়ে বেঁচে থাকতে না পারে, তবে আমাদের নগরজীবনের চাকা একদিন থেমে যাবে। তাই এখনই কিস্তি নির্ভর শোষণের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »