
বাংলাদেশে এখন স্বাস্থ্যসেবার নতুন সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। মাথা ব্যথা হলে নিউরো মেডিসিনে যান, বুকে ব্যথা হলে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে ছুটুন, হাঁটুতে ব্যথা হলে দেশ সেরা অর্থোপেডিক সার্জন খুঁজুন।
এমবিবিএস ডাক্তারদের দেখানো মানে যেন চিকিৎসা না করানো—এই ভুল ধারনাই এখন ট্রেন্ড!
ভাবুন তো, আপনি যদি আজ হঠাৎ ডান হাতটা একটু ঝিঝি করে, তখন তো আপনি নিশ্চয়ই নিউরোসার্জনের কাছে যাবেন, কারণ এটা নিশ্চিত ‘ব্রেইন স্ট্রোক’। আর হাঁটুতে কষ্ট হলে অর্থোপেডিক সার্জনের টিকেট খুঁজুন—জয়েন্ট বদলাতে হবে তো!
এভাবেই আমাদের রোগী ও পরিবারের একাংশ “ডাক্তার দেখানো”কে যেন একটা “ঈদ শপিং” বানিয়ে ফেলেছে। সেরা ব্র্যান্ডেরটা না হলে চলবেই না। সমস্যার গভীরে না গিয়ে সরাসরি কাটা-ছেঁড়া, ব্যয়বহুল টেস্ট আর বিশাল প্রেসক্রিপশনের আশায় ছুটছেন বিশেষজ্ঞদের কাছে।
তবে একটা ছোট্ট প্রশ্ন: এই “বিশেষজ্ঞের দুনিয়া”তে কি কেউ রোগীকে সামগ্রিকভাবে দেখছে ? বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ, স্বাভাবিকভাবেই তাদের নির্দিষ্ট বিশেষজ্ঞতা নিয়েই চিন্তা করেন।
তারা তাদের বিষয়ে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর বিষয় সম্পর্কেও জ্ঞান রাখেন। তার বিষয়ে পৃথিবীর আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে খোঁজ রাখেন। নিজের সাবজেক্টের খুঁটিনাটি জানতেই, তারা পুরো রোগীকে দেখতে ভুলে যান – তৈরি হয় “টানেল ভিশন”। বেশিরভাগ হৃদরোগ চিকিৎসক জানবেন না আপনার গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা স্ট্রেস থেকে, না শারীরিক কোন দুর্বলতা থেকে? কাজেই ফলাফল—অপ্রয়োজনীয় ইকো, সিটি স্ক্যান, এনজিওগ্রাম, থেরাপি, ডিভাইস, ভুয়া আশ্বাস আর খালি পকেট।
এমতাবস্থায় আমরা যদি একটু সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করতাম, তাহলে আগে কোনো ভদ্রলোক এমবিবিএস ডাক্তার দেখিয়ে তার মূল্যায়নটা শুনে নিতেন। হ্যাঁ, তারা “শুধু এমবিবিএস”—তবে তারা সিস্টেম জানেন, আপনার উপসর্গের ব্যাপারে কোন পথে চিকিৎসা নেওয়া উচিত সেটা বোঝেন। সবচেয়ে বড় কথা, তারা অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসার হাত থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারে।
উন্নত দেশগুলোতে জিপি বা ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান ছাড়া আপনি বিশেষজ্ঞ দেখাতে পারবেন না—কারণ তারা জানে, সরাসরি ‘সুপার ডুপার স্পেশালিস্ট’ দেখানো মানে নিজের পকেট কাটা এবং অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসার শিকার হওয়া।
আমরা কিন্তু এখনো সেই যুগে আছি যেখানে “বিশেষজ্ঞের প্রেসক্রিপশন মানেই জিত”—এমনটাই মনে করি। অথচ অনেকে জানেন না, রোগ ভালো করার চাইতেও রোগ ভালো করে ফেলার রাস্তা তৈরি করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ
তাহলে করণীয় কী ?
কোন উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমে কাছের কোনো MBBS ডাক্তার দেখান। আপনার টাকা, সময়, টেনশন—তিনটাই বাঁচবে।দেশসেরা চিকিৎসক দেখানো দরকার কিনা, সেটা আগে আপনার এলাকায় থাকা ‘সাধারণ এমবিবিএস’ ডাক্তারের সঙ্গে একটু কথা বলে নিন।
শেষ কথা
বিশেষজ্ঞরা প্রয়োজনীয়—তবে তাদের জ্ঞানেরও একটা গণ্ডি আছে। আর রোগের চিকিৎসা মানে এই না যে আপনি শপিং মলে(বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বার) ঢুকে এক এক করে সব ব্র্যান্ড ট্রাই করছেন, এমনও না। তাই চিকিৎসার যাত্রা শুরু হোক এমবিবিএস ডাক্তার দিয়ে —অন্যথায় চিকিৎসার নামে এই সার্কাস দেশে চলতেই থাকবে।
ডাঃ মোঃ তওফিক আলম সিদ্দীকী (জাফরান)
অর্থোপেডিক সার্জন রেজিস্ট্রার, অর্থোপেডিক সার্জারি
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।
চেম্বার:
মাউন্ট এডোরা হসপিটাল, আখালিয়া, সিলেট।
সময় : ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (শনিবার থেকে বুধবার)
হটলাইন : ০১৮৩৮২০৪১১৩, ০৯৬১০৮৪৮৪৮৪
সম্পাদনায়: জ. ই বুলবুল