
ঘাড় ব্যথায় অবহেলা করবেন না
ঘাড় ব্যথার কি ও তার ধরণ
আধুনিক জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা ল্যাপটপ কম্পিউটার সহ বিভিন্ন ডিভাইসের উপর নির্ভরতার পরিমাণ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘদিন শারীরিক বিকৃত ভঙ্গির কারনে দেখা দিচ্ছে মেরুদন্ডের সমস্যা, তন্মধ্যে ঘাড় ব্যথা অন্যতম।
অনেক জটিল কারনেও ঘাড় ব্যথা হতে পারে। অনেকেই সামান্য ব্যথায় তেমন কোন গুরুত্ব প্রদান করেন না। বিভিন্ন পেশাজীবি, যারা সামনে ঝুঁকে কাজ করেন, তারা সহজেই ঘাড় ব্যথায় আক্তান্ত হয়ে থাকে। আবার, কর্মজীবি মানুষ, যারা ঘাড়ে, মাথায় বা কাধে ভারী জিনিস বহন করেন তাদের ঘাড় ব্যথার প্রবনতা বেশি। সঠিক চিকিৎসার অভাবে ঘাড় ব্যথায় মানুষের দীর্ঘমেয়াদি নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে।
সমস্যার কারণ
প্রায় সকল বয়সের মানুষেরই ঘাড় ব্যথা হতে পারে।
কারণসমূহ-ঘাড় ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে তার মাঝে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে উল্লেখ করা হলো
১) আঘাত জনিতঃ ঘাড়ের পেশি ও লিগামেন্টে হঠাৎ করে টান অথবা চাপের কারণে।
২) সঠিকভাবে না বসার কারণে ঘাড়ের হাড়গুলোর বক্রতার অস্বাভাবিক পরিবর্তন।
৩) ঘাড়ের মেরুদন্ডে ডিস্ক জনিত সমস্যা- ডিস্কের উপর অতিরিক্ত চাপ, ডিস্কের স্থানচ্যুতি, মেরুরজ্জু বা নার্ভের উপর চাপ।
৪) বাত জনিত কারণে।
৫) বয়স জনিত পরিবর্তন।
৬) অত্যাধিক মানসিক চাপ।
৭) কিছু ফিজিওলজিক্যাল কন্ডিশনের কারণে।
উপসর্গঃ
ঘাড় ব্যাথা। ব্যাথা কাধে, বুকে, মাথার পিছনে, বাহু, কনুই কিংবা হাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ঘাড়ে ব্যাথা, সকালে ও শেষ রাতে ঘাড় জ্যাম হয়ে থাকা, সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করতে কষ্ট হওয়া
হঠাৎ তীব্র ঘাড় ব্যাথা, ঘাড় ঘুরাতে কষ্ঠ হওয়া, ঘাড় একদিকে বেকে যাওয়া।
ঘাড়ে থেকে হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত ঝি ঝি করা বা অবশ মনে হওয়া বা বোধশক্তি কমে যাওয়া। কিছুক্ষেত্রে, হাত-পা দুর্বলতা, মাংশ শুকিয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।
অনেক সময় ঘাড়ে ব্যাথার পাশাপাশি মাথা ঘুরানোর মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
কারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে :
– যারা সারাক্ষণ ঘাড় সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করেন- অফিসে কিংবা বাড়িতে।
– যারা মাত্রাতিরিক্ত কম্পিউটার,ল্যাপটপ, মোবাইল ইত্যাদি ব্যবহার করেন।
– যারা ঘাড়ে, মাথায় বা কাধে ভারী জিনিস বহন করেন।
– যারা অত্যাধিক ভ্রমন করেন।
– যারা উচু বালিশ ব্যবহার করেন দীর্ঘদিন যাবত।
এর থেকে সমাধানের উপায়ঃ
ঘাড়ের ব্যথার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এই বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার পাশাপাশি প্যাথলোজিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ণয় করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন অতিব জরুরী। বেদনানাশক ঔষধ, পেশীর রিল্যাক্সেন্ট ঔষধ উপকারী হতে পারে অনেক আংশে। তবে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। বিশেষজ্ঞ একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম করতে পারেন তাতে খুব উপকার আসবে । কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসা দেওয়া হয়। এমনকি, মারাত্মক ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল চিকিৎসারও প্রয়োজন হতে পারে। তাছাড়া, পর্যাপ্ত পরিমানে সঠিক দেহভঙ্গিতে ঘাড়ের বিশ্রাম প্রয়োজন।
প্রতিরোধের উপায়ঃ
সঠিক দেহভঙ্গি ও সুস্থ জীবনধারা মেনে চলতে হবে। তাই—
শক্ত, সমান বিছানা, পাতলা তোষক, মাজারী আকৃতির এক বালিশে শোবেন। কোনক্রমেই, উচু বালিশ, দুই বা ততোধিক বালিশ অথবা অত্যাধিক পাতলা বালিশে শোবেন না । প্রয়োজনে, সার্ভাইক্যাল পিলো ব্যবহার করা যাবে।
ঘাড় সোজা রেখে চেয়ারে বসুন। টেলিভিশন দেখার সময় বা কম্পিউটারে কাজ করার সময় যথাসম্ভব চোখ মনিটরের লেবেলে রাখুন।
০১। বিছানায় শোয়ে অথবা একনাগাড়ে দীর্ঘসময় ঘাড় নুইয়ে মোবাইল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
০২। কর্মক্ষেত্রে বা পড়াশুনার সময় টেবিল চেয়ারের যথাযথ ভারসাম্য বজায় রাখুন।
০৩। নঘাড়ে, মাথায় বা কাধে ভারী জিনিস বহন করা থেকে বিরত থাকুন।
০৪। অত্যাধিক ভ্রমন করার সময় সাড়ভাইকেল কলার ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে ভ্রমনের সময় অর্থোসিস(সার্ভাইক্যাল কলার) ব্যবহার করা যেতে পারে।
০৫। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা পরিহার করুন। মাঝে মাঝে উঠে হাঁটাচলা করুন।
০৬। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলোতে থাকুন।
০৭। নিয়মিতভাবে খাবারের তালিকায় ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও বিভিন্ন খনিজ লবণযুক্ত খাবার রাখুন। সামুদ্রিক মাছ শাকসবজি রাখতে পারেন নিয়মিত।
ডা, মো. সাইদুর রহমান
সহকারী অধ্যাপক,
চীফ কনসালটেন্ট ও চেয়ারম্যান
ফিজিওথেরাপি এন্ড ডিজিবিলিটি ম্যানেজমেন্ট,
স্পেশালিস্ট রিয়েক্টিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার, (লিফটের – ৫) ৪০৭
ফনিক্স টাওয়ার শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ এভিনিউ, সাতরাস্তা, তেজগাঁও,ঢাকা।
প্রয়োজনে: ০১৭১৬ ৪৫৩ ২০৫